আদর্শ মাদ্রাসার ছাত্রীকে নিয়ে পর্ণগ্রাফী তৈরী নিয়ে তোলপাড়

দুই শিক্ষক বরখাস্ত
মাদ্রাসার ছাত্রীকে নিয়ে ভিডিও পর্ণগ্রাফী তৈরীর অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ আদর্শ মাদ্রাসার অর্থনীতি প্রভাষক ও সহকারি শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন খবর নিশ্চিত করছেন মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক। শিক্ষক দুইজন হলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ভাগিনা সাকিব কামাল ও ভাতিজি আকলিমা।

সাকিব কামালকে প্রাথমিকভাবে ভাতিজি আকলিমার সহযোগিতার অভিযোগও পাওয়া গেছে। মূল সহযোগিতা করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান। বর্তমানে তাদেরকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জামায়াতের সাবেক আমির মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এ.বি.এম ফজলুল করিম, জামায়াতের আর এক নেতা নুরুল হক পাটোয়ারী, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল হক মাদবর ও কমিটির সদস্য আবুল হোসেন বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমনকি ঈদের পরে তাদেরকে পুনরায় মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের এই নেতারা বিরুদ্ধে। ভিডিও পর্ণগ্রাফীটি বিভিন্নভাবে মুন্সীগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।

প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। ভিডিওটিতে দেখা যায় মাদ্রাসার উত্তর পাশের টিন সেড বিল্ডিয়ের ছাত্রাবাসে করা হয়েছে। এমনকি মাদ্রাসা ছাত্রীর বাসায়ও করা হয়েছে। অধ্যক্ষের ভাগিনা বলে কথা। যা করুক না কেন সাত ক্ষুন মাফ। ছাত্রদের থেকে জানা যায়, কফেকদফা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ মাদ্রাসায় গিয়ে চাঁদা আনারও অভিযোগ রয়েছে।

অধ্যক্ষের ভাগিনা (মাদ্রাসার শিক্ষক সাকিব কামাল) মাদ্রাসার ছাত্রীকে দিয়ে পর্ণ তৈরী করে এখন অন্য শিক্ষকদের শাশিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি জামায়াতের এক নেতাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন এসব পর্ণতৈরী করলে কিছু আসে যায় না। কিছুই হবে না।

মুন্সীগঞ্জ আদর্শ ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা মুন্সীগঞ্জ শহরের একমাত্র আলিয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি জামায়াতের নিয়ন্ত্রনে চলে। জামায়াতের জেলা আমীর যিনি হন তিনিই এই মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি হন। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি বর্তমানে এই মাদ্রাসার সুপারের অপকর্ম সভাপতির আর্শিবাদে দিন দিন বেড়েই চলছে।

কোচিং বানিজ্য, ভর্তি বানিজ্য, ভাউচার বানিজ্য। এমনকি এখন সে তার আপন ভাগিনাকে দিয়ে পর্ণ ভিডিও ছবিও নির্মাণ করেছেন। পর্ণ তৈরীকারী অধ্যক্ষ কিভাবে মাদ্রাসায় এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা সকলের প্রশ্ন? বিষয়টি এখন মুন্সীগঞ্জে আলোচনার ঝড় বইতেছে।

এ ধরনের একজন পর্ণতৈরীকারী অধ্যক্ষ কিভাবে মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করে এবং মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়? বর্তমানে তিনি সকল শিক্ষকদের চাকুরী ও এমপিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এমনকি কয়েকজন শিক্ষকের কাছে সেমাই চিনি দিয়ে বুকে বুক মিলিয়ে যাতে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয় সে ব্যপারে সতর্ক করে যায়। মুন্সীগঞ্জ আদর্শ ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসাটিতে ফাজিলের অনুমতি না নিয়েও ফাজিলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করছেন। যাদের শিক্ষক হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই তাদেরকে তিনি শিক্ষক বানিয়ে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিশেষ করে অষ্টম, নবম, দশম ও আলিম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের তার আপন ভাগিনা নামে মাত্র শিক্ষক তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন এই মাদ্রাসার সুপার।

গণিতের শিক্ষক না হয়েও তিনি গণিতের শিক্ষক বনে গেছেন। তার ভাগিনার নাম সাকিব কামাল, ভাতিজির নাম আকলিমা। ভাগিনা ও ভাতিজি প্রথমে ছাত্র হিসেবে হরগঙ্গা কলেজে ভর্তি হন। তিন চার বার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেন এইস.এস.সিতে। পরবর্তীতে অনার্সও একই অবস্থা। ফেলই যেন তার ফলাফল। কোনভাবে টেনেটুনে পাশ করেছেন বলে জানা গেছে। সেই অযোগ্য গণিত শিক্ষক পরবর্তীতে অর্থনীতি প্রভাষক বনে যায়। ভাতিজি হয়ে যায় মহিলা শাখার সহকারি শিক্ষক। পরবর্তীতে মামা মাদ্রাসার সুপার মাহবুবুর রহমান ও ভাতিজি আকলিমার সহযোগিতায় আলিমের এক ছাত্রীকে দিয়ে মাদ্রাসার হোস্টেলের নিজ বেডে পর্ণ ভিডিও তৈরী করেন।

সেই পর্ণটি ভিডিও করেছেন মামা এমন অভিযোগ উঠেছে। মামা ভাগিনার পর্ণ ভিডিওটি ফাঁস হয়ে যায় মাদ্রাসার ছাত্র ও স্থানীয়দের কাছে। এক পর্যায়ে এই ভিডিওটি শিক্ষকদের কাছে চলে আসে। তাছাড়া মাদ্রাসার ছাত্ররা এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় আলিম বিভাগের মেসে থাকা ছাত্রদেরকে ব্যাপক মারপিট করেন অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিব কামাল।

পরবর্তীতে কমিটির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করলে ভাগিনা সাকিব কামালকে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তার নিজ বাড়ি চাঁদপুর হাজিগঞ্জের মাড়ামুড়ায় পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন পরে তার ভাতিজি আকলিমাকে এই পর্ণগ্রাফী তৈরীতে সহযোগিতা থাকার কারণে তাকেও বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আলীম ছাত্র জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রিন্সিপালের ছত্রছায়ায় শিক্ষক শাকিব কামাল ও আকলিমা মিলে ভিডিও পণ্যগ্রাফী তৈরী করে। হোস্টেলের ভিতরে মেয়েদের সাথে দৈহিক মেলামেশা করতো। একদিন শিক্ষকের পাশের রুমে থাকা ছাত্রদের দরজার পাশে মেয়েদের সেন্ডেল দেখতে পান হোস্টেলে থাকা ছাত্ররা।

পরে ছাত্ররা শিক্ষকের রুমে গিয়ে আলো নিভানো অবস্থায় একটি মেয়ের সাথে দেখতে পান। এর বেশকিছু দিন পর শিক্ষকের রুমে যাওয়া আসা করা কয়েকজন ছাত্র শিক্ষকের ল্যাপটপে গজল এবং ইসলামিক গান শুনছিলেন। হঠাৎ ছাত্ররা শিক্ষকের ল্যাপটপে একটি ভিডিও পণ্য ক্লিপ দেখতে পায়। সাথে সাথে ছাত্ররা মাদ্রাসার অন্যান্য সিনিয়র ছাত্রদের বিষয়টি জানালে তারা ভিডিওটি প্যানড্রাইভে করে নিয়ে আসেন।

ছাত্ররা সকলে মিলে অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিবকে সাশিয়ে সতর্ক করে দেন। পরে বিষয়টি প্রিন্সিপালসহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল হক মাদবরসহ সকলকে জানায় ছাত্ররা। অভিযোগের বিষয়টি প্রথমে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাহাবুবুর রহমান অস্বীকার করেন। ছাত্ররা সমস্ত প্রমাণ দেখানোর পর প্রিন্সিপাল বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর অভিযুক্ত দু’জন শিক্ষক শাকিব কামাল ও আকলিমা পালিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর প্রিন্সিপাল ছাত্রদেরকে জানান যে, তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আদর্শ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল হক মাদবর বলেন, আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই অভিযুক্ত শিক্ষকরা পালিয়ে যায়। এ মাদ্রাসা চালুর পর থেকে এমন নানা ঘটনা ঘটে আসতেছে।

এ প্রিন্সিপাল ও দু’জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরো একবার এমন অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। যারা এসব অপকর্ম করেছে বা করতে সহযোগিতা করেছে তাদেরকে সুলে চড়িয়ে শাস্তি দেওয়া উচিত। অভিযুক্ত প্রিন্সিপালকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিলে মাদ্রাসাটি কলঙ্ক মুক্ত হবে।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা মাওলানা মাহবুবুর রহমানকে ফোন করিলে তিনি অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বহিস্কারের বিষয়টি স্বীকার করেন। অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলের সুইচ অফ করে দেন। পরে একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুন্সিগঞ্জ নিউজ

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.