নদীর ছয় স্থানে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার

টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পদ্মার একটি শাখানদীতে বেড়া দেওয়ায় মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মারা পড়ছে, দেখা দিয়েছে নাব্যতা–সংকট। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পদ্মার একটি শাখানদীতে অবৈধভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। উপজেলার দিঘিরপাড়, কামারখাড়া ও হাসাইল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর ৬টি স্থানে বাঁধ দিয়ে ২০ দিন ধরে এভাবে মাছ ধরা চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিঘিরপাড় ইউনিয়নের প্রভাবশালী ও স্থানীয় মৎস্য আড়তদার আবদুল মন্নান খান নদীর মধ্যে বেড়া দিয়েছেন। এসব বেড়ায় বেঁধে রাখা জালে ধরা পড়ছে মা মাছ, রক্ষা পাচ্ছে না পোনাও। বেড়া দিয়ে রাখায় ওই নদীতে নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গিবাড়ীর হাসাইল ট্রলারঘাট এলাকার উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি অবৈধ বেড়া। এ ঘাট থেকে ট্রলারে করে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে দিঘিরপাড়ের দিকে যেতে যেতে নদীর দুই পাড়ে এমন আরও পাঁচটি বেড়া দেখা যায়। বেড়াগুলো বাঁশ, বানা ও জাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এসব বেড়া নদীর তীর থেকে শুরু হয়ে কোথাও কোথাও ৪০০ ফুট গভীর পর্যন্ত ছাড়িয়েছে। বেড়ার একপাশ দিয়ে মাছ ঢুকে জেলেদের পাতা জালে ধরা পড়ে।

নদীতীরে বসবাসকারী একাধিক জেলে বলেন, ‘আগে এ নদীতে জাল, পোলো, চাঁই, দোয়াড়ি, বিত্তি, খাদম, বড়শি ফেললেই নানা রকম মাছ ধরা পড়ত। মাছ বিক্রি করে আমাদের সংসার ভালোই চলত। অবৈধভাবে বেড়া দিয়ে মাছ শিকারের কারণে তিন বছর ধরে নদীতে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছি না। কোথাও জাল ফেললেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’

নদীতে অবৈধভাবে বেড়া দেওয়ার কারণে মাছ ও জলজ প্রাণী তো ধ্বংস হচ্ছেই, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে নৌ চলাচলও। নদীতে সৃষ্টি হচ্ছে নাব্যতা–সংকট। বিভিন্ন স্থানে জাগছে চর।

ট্রলারচালক সিরাজ ব্যাপারী বলেন, এই নদী দিয়ে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলার, বাল্কহেডসহ কয়েক শতাধিক নৌযান চলাচল করে। বর্ষার পর নদী এমনিতেই সরু হয়ে গেছে। তার মধ্যে নদীর বিভিন্ন অংশে মাছ ধরতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রায়ই একাধিক নৌযান মুখোমুখি হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে। নদীর স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নাব্যতা তৈরি হচ্ছে। নৌযান প্রায় সময় ডুবো চরে আটকে যাচ্ছে।

নিরাপদ নৌপথ, নদী ও জলজ সম্পদ বাঁচাতে দ্রুত বেড়াগুলো অপসারণ করার দাবি নৌযানচালক, শ্রমিক, জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। নদীতে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘বেড়া দিয়ে সাগর পোনা মাছ (কাচকির চেয়ে আকারে ছোট একটি বিশেষ মাছ) ধরা হয়। সবার এসব মাছ খাওয়ার অধিকার আছে। বেড়া অপসারণ করতে আপনাদের যা মন চায়, আপনারা তা করেন।’

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে নদীতে থাকা অবৈধ বেড়া অপসারণ করতে অভিযান চালানো হয়। এরপরও যাঁরা বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.