রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে সফল অর্ধশতাধিক চাষি (ভিডিও)

রাস্তার দুই পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে সারা ফেলেছেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অর্ধশতাধিক চাষি। কয়েক বছর ধরে উপজেলার আউটশাহী ও বেতকা ইউনিয়নের রাস্তার পাশের ২ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন সবজি চাষ নজর কাড়ছে অনেকের।

স্থানীয় জাফর, আক্তার, সাইফুল, আবু তাহেরসহ অর্ধশতাধিক কৃষক রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শিম, লাউ, কুমড়া চাষ করে যেমন নিজেদের সবজির যোগান দিচ্ছেন, পাশাপাশি উৎপাদিত সবজিগুলো বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।

একে অন্যকে দেখে আগ্রহী হওয়ায় সেখানে সবজি চাষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এতে মৌসুমি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কিছুটা হলেও কমছে বেকারত্ব, বাড়ছে কৃষি আয়।

একদিকে এ সমস্ত সবজি যেমন চাষিরা সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছে বাজারে অন্যদিকে রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের চাঙ্গুরীবাড়ি হতে পাশের আউটশাহী ইউনিয়নের আউটশাহী গ্রাম পর্যন্ত সড়ক ও চাঙ্গুরী হতে পাশের সুবুচনি সংযোগ সড়কে ২ কিলোমিটারের অধিক রাস্তার দু-পাশ জুড়ে চাষ করা হয়েছে শিম, লাউ, কুমড়া, টমেটো, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজির। রাস্তার দুই ধারে গাছ লাগিয়ে রাস্তার পাশে তৈরি করা হয়েছে বিশাল ঝাকা (মাচা)।


সাধারণত রাস্তার পাশে ফাঁকা জমি থাকায় এবং রাস্তার মাটি পাশের জমি হতে বেশ উঁচু হওয়ায় গাছে প্রচুর আলো ও বাতাস লাগে বলে জানান চাষিরা। তাই রাস্তার পাশে সবজির বাম্পার ফলন হয়। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের এই অঞ্চলের জমিগুলো সাধারণত ৬ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তাই কৃষক তলিয়ে থাকা জমিতে চাষাবাদ করতে পারে না। কিন্তু রাস্তার পাশের জমি পানিতে তলিয়ে না যাওয়ায় সারাবছর সবজি চাষ করা যায়।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আউটশাহী গ্রামের জামাল শেখ ৪ বছর আগে সর্বপ্রথম ওই অঞ্চলে রাস্তার পাশে সবজি চাষ শুরু করেন। তার সফলতা দেখার অন্যান্যরাও সবজি চাষ শুরু করে। এভাবে প্রতি বছরই বাড়তে থাকে সবজি ফলন। বর্তমানে ওই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক চাষি রাস্তার পাশের পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন।

চাঙ্গুরী গ্রামের জাফর সাইফুল, খোরশেদ হালদার, আউটশাহী গ্রামের সাহাজ উদ্দিনদের দীর্ঘ রাস্তার পাশের শিম গাছের মাচা দৃষ্টিকারে ওই পথে যাতায়াতকারীদের। চাঙ্গুরী গ্রামের আব্দুল মজিদ দেওয়ান বলেন, রাস্তার পাশে এই জমিগুলো ফাঁকাই পড়েছিল। পরে এগুলোতে আমরা আবাদ শুরু করি। এখন শুধু আমাদের চাঙ্গুরী গ্রামের ২৫ থেকে ৩০ জন আবাদ করতেছে পাশের গ্রামের লোকজনও আবাদ করে। রাস্তার পাশে অনেক স্থান ফাঁকা থাকে ওই ফাঁকাস্থানে চাষাবাদ করাতে ফলন ভালো হয়। আমারা নিজেরাও খাই আবার বাজারে বিক্রিও করি।

আবু তাহের নামের অপর এক চাষি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে অনেকেই রাস্তা পাশে ক্ষেত করতেছে। আমি এ বছর শুরু করেছি। শিম, টমেটো বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়া, বরবটি লাগাইছি। বেশ ভালো হইছে। একদিকে নিজেরা খাচ্ছি অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজনকে দিচ্ছি আবার বিক্রিও করছি।

আরেক চাষি মজিদ দপ্তরী বলেন, আমি দির্ঘদিন মালয়শিয়া ছিলাম। দেশে এসে রাস্তার পাশের জমিতে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, কাঁচা কলা লাগাইছি।নিজেরা খাই, আত্মীয়-স্বজনদের দেই আবার বিক্রিও করি। এভাবে সংসার চলাইতেছি। রাস্তার পাশের উঁচু জমি হওয়ায় ফলন ভালো হয়, আলো-বাতাস ভালো পায়। নিচু জমিতে পানি উঠে যায় উঁচু রাস্তার পাশে জমিতে পানি না ওঠায় একের পর এক পরিবর্তন করে সবজি চাষ করা যায়।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ওয়াহেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।

ব.ম শামীম/আরকে

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.