উদ্ভাবন : ক্যালসিয়ামের ভান্ডার সুপারক্যারট’ বা সুপার গাজর

গাজর একটি উত্‍কৃষ্ট ধরনের সবজি৷ বলা হয়ে থাকে ক্যান্সার প্রতিরোধে এর জুড়ি মেলা ভার৷ চমত্‍কার রং ও বাহারি স্বাদের জন্য গাজর শুধু সবজি হিসাবেই নয়, সালাদের উপকরণ ও জুস তৈরিতে এর রয়েছে বহুমুখি ব্যবহার৷ ফলে দিন দিন এর কদর বেড়েই চলেছে৷ বসে নেই উত্‍পাদন পর্যায়ের খামারি থেকে পুষ্টি বিজ্ঞানীরাও৷ চলছে মানগত উত্‍কর্ষতা বাড়ানোর নানা গবেষণা৷ তারই মধ্যে আশার বাণী শুনিয়েছেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী৷ তাদের দাবি, তারা সম্প্রতি এমনই এক ধরনের গাজর উদ্ভাবন করেছেন- সাধারণ জাতের গাজরের চেয়ে এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৪১ ভাগ বেশি৷ তাদের ভাষায়, উদ্ভাবিত গাজর নিয়মিত ভৰণে হাড় ও অস্থি হবে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ- মজবুত৷ ফলে হাড় ভঙ্গুর ঝুঁকি যাবে কমে৷

টেক্সাসের বেলর কলেজ অব মেডিসিনের একদল গবেষক বেশ কিছুদিন যাবত্‍ গাজর নিয়ে পরীৰা-নিরীৰা চালিয়ে আসছিলেন৷ তাদের মতে, শরীরের জন্য প্রতিদিন দরকার ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম৷ আর এর প্রাথমিক উত্‍স হচ্ছে- দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য৷ অথচ এতে অনেক সময় কারো কারো শরীরে দেখা দেয় এলার্জি, তাই ক্যালসিয়ামের বিকল্প উত্‍স হতে পারে গাজর৷ তারা জিন প্রকৌশলের সাহায্যে যে গাজর উত্‍পাদনে সৰম হয়েছে তা এৰেত্রে জাদুর মতো কাজ দেবে৷ সাধারণ গাজরের তুলনায় এটি বহুলাংশে কার্যকর৷ তাই তারা এর নাম দিয়েছে ‘সুপারক্যারট’ বা সুপার গাজর৷

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য প্রফেসর কেনডাল হার্চি বলেন, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে এবং অতিসতর্ক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুপারক্যারট বা সুপার গাজর উত্‍পাদন করা হয়েছে৷ তবে তার ভাষায়, এ জাতীয় গাজর ব্যাপকভিত্তিক বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক উত্‍পাদনের আগে আরো নিবিড় গবেষণা হওয়া দরকার৷ উলেস্নখ্য, গাজর নিয়ে গবেষণা এটি প্রথম নয়৷ এমনকি জিন প্রেকৌশলও এর আগে হয়েছে৷ জানা যায়, গাজর উত্‍পাদনে জিন প্রকৌশলগত প্রক্রিয়া সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেন ডাচ্ গবেষকরা৷ সময়টা সপ্তদশ শতাব্দী৷ ডাচ্দের জাতীয় পতাকার বেগুনি অংশের প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে এতে যোগ করা হয় জিনেটিক উপাদান৷ ফলে তাদের উদ্ভাবিত গাজর ধারণ করে পার্পল বা বেগুনিবর্ণ৷ এরপর কয়েকদফা জিনেটিক গবেষণা ও তা প্রয়োগ হলেও রং বদলানো হয়নি৷ বিজ্ঞানীদের মতে, গাজর ও ব্রকলি নামে এক জাতীয় ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সালফোরাফেন নামক একটি রসায়ন- যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে৷ গবেষকদের ভাষায়, সুপারক্যারট বা সুপার গাজর খেলে রাতারাতি স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে- এমনটি নয়৷ মূলতঃ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে এ জাতীয় গাজর গুরম্নত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে কাজ করবে৷

বিশেষ করে যাদের হাড় ও অস্থি দুর্বল তাদের জন্য এটি আশীর্বাদ৷ গাজরের ওপর কাজ করে কামিয়াব হওয়ার পর এবার চলছে ব্রকলিতে বাড়তি ক্যালসিয়াম ধারণের উপায় নিয়ে গবেষণা৷ তাতে সফল হলে এৰেত্রে আরো উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়ে যাবে৷ সে সুযোগের অপেৰায়ই আছি আমরা৷

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.