হিমাগার থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে আলু, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষিত পাইকার ও কৃষকদের আলু বের করে দিচ্ছে মালিকপক্ষ। এতে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা গত বছরের ৩০ নভেম্বর শেষ হলেও আলুর দাম না পাওয়ায় তারা হিমাগার থেকে আলু বের করেননি। ফলে মালিকপক্ষ হিমাগারে থাকা আলুগুলো শ্রমিক দিয়ে বাইরে বের করে ফেলে রাখছে। হিমাগারগুলোতে এখনো বিপুল পরিমাণ আলু রয়ে গেছে।

হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন আলু রয়ে গেছে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হিমাগারগুলোতে ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে ৫০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। এতে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৬-৭ টাকা। অথচ আলু উৎপাদন, হিমাগার ভাড়া, যাতায়াত খরচ নিয়ে হিমাগারের আলুর কেজি প্রতি কৃষকের খরচ পড়েছে ১৮-২০ টাকা।

গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছিল। আর আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদিত আলুর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে সচল ৬৪টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু।

সরেজমিনে সদর উপজেলার পঞ্চসার হিমাগার, টংগিবাড়ী উপজেলার শরিফ কোল্ড স্টোরেজ, ইউনুস কোল্ড স্টোরেজসহ আরও কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে দীর্ঘ বস্তার সারি। এ বস্তাগুলো হিমাগার থেকে বের করে রেখে দিয়েছে মালিকপক্ষ। আলুর দাম না থাকায় পাইকাররা হিমাগার মালিকদের বের করে দেওয়া আলু কোথায় বিক্রি করবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।

এ বিষয়ে আলুর পাইকার রাজু বেপারী বলেন, এ বছর আলুর ব্যবসায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। কিছু আলু রেখে দিয়েছিলাম শেষ সময়ে দাম বাড়ার আশায়। কিন্তু এখন আলু ৩০০ টাকা বস্তাও বিক্রি করতে পারছি না। কোল্ড স্টোরেজের মালিক আলু বের করে হিমাগারের সামনে ফেলে রেখেছে। বাধ্য হয়ে আলুগুলো বাছাই করছি। বাছাই শেষে আলুর আড়তগুলোতে খোঁজ নিব। যে আড়তে দাম একটু ভালো আছে সেখানে আলুগুলো পাঠাব।

অরেক ব্যবসায়ী মান্নান বলেন, ‘টংগিবাড়ীর সোবহান কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখছিলাম। কোল্ড স্টোরেজ মালিক বাইর কইরা স্টোরের সামনে ফালাইয়া রাখছে। মাঝে মাঝে আইসা পাহাড়া দিতাছি আর খোজঁ নিতাছে কোন আড়তে আলু কত দামে বেচাকেনা হচ্ছে। গাড়ি ভাড়া না পোষাইলেতো আর আড়তে পাঠাইমু না। গরু মালিকদের কাছে যা মূল্য পাই সেই মূল্যে বিক্রি করে ফেলাইমু।’

আব্দুর রহিম নামে অপর এক পাইকার বলেন, ‘আলু বাইর কইরা ফেলাই রাখছে স্টোরেজ মালিকরা। তাই বাধ্য হয়ে লেবার নিয়ে সেই আলু বাছাই করছি আর খোঁজ নিচ্ছি কোনো আড়তে দাম বেশি পাওয়া যায়। যে আড়তে দাম বেশি পামু সেই আড়তে আলুগুলো পাঠাইয়া দিমু।’

পঞ্চসার কোল্ড স্টোরেজের শ্রমিক সর্দার মজিবুর বলেন, ‘এখন আর আমাদের হিমাগারে আলু নেই। নতুন আলু রাখতে হবে। তাই আমরা সব আলু বের করে দিছি।’

শরীফ কোল্ড স্টোরেজের হিসাবরক্ষক আলমগীর কবির বলেন, আগামী বছর আলু রাখার জন্য আমাদের হিমাগার মেরামতের কাজ চলছে। আলুর পাইকাররা আলু না নেওয়ায় আমরা আপাতত সাড়ে ৬ হাজার বস্তা আলু বের করে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। ভেতরে আরও সাড়ে ৬ হাজার বস্তা আলু এখনো রয়ে গেছে।

টংগিবাড়ীর মুটুকপুর ইউনুস কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. আহসানুল রাব্বি বলেন, এখনো আমাদের হিমাগারে ৯ হাজার ১০০ বস্তা আলু রয়ে গেছে। অথচ ৩০ নভেম্বর আলু সংরক্ষণের সময় শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হিমাগার ভাড়া প্রতি বস্তা ২২০ টাকা আর প্রতি বস্তায় লোন দিয়েছিলাম ৩০০ টাকা। লোনের সুদ ৩০ টাকা সব মিলিয়ে বস্তা প্রতি আলুতে আমাদের বিনিয়োগ এখন ৫৫০ টাকা। অথচ আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। তাই যারা ঋণ নিয়েছেন তারা আলু নিতে আসছেন না। বাধ্য হয়ে আমরা চিপস ফ্যাক্টরিকে ডেকে আলু নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছি। সামনে আলু রাখার জন্য হিমাগার সংস্কার করতে হবে। তাই আলু বের করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ওয়াহিদুর রহমান বলেন, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন হিমাগারে এখনো ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু রয়ে গেছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আলু আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে। আলু আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৬ হেক্টর জমিতে।

ব.ম শামীম/আরএআর

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.